বাংলা । English
আন্তর্জাতিক আলোক দিবস ২০২১
বিস্তারিত
বিস্তারিত
বিস্তারিত
বিস্তারিত
বিস্তারিত
বিস্তারিত
বিস্তারিত
বিস্তারিত
আন্তর্জাতিক আলোক দিবস কী?
আলো ও সর্বক্ষেত্রে আলোর প্রায়োগিক দিক নিয়ে আয়োজিত একটি বৈশ্বিক উদ্যোগ এই আন্তর্জাতিক আলোক দিবস। বিজ্ঞান, শিল্প, সংস্কৃতি, শিক্ষা এবং টেকসই উন্নয়ন থেকে শুরু করে চিকিৎসাশাস্ত্র, যোগাযোগ এমনকি শক্তির উৎস হিসাবে আলোর ভূমিকা ও এর বহুমুখী প্রয়োগ অনুধাবন ও মূল্যায়নের লক্ষ্যে বিশ্বব্যাপী এর আয়োজন করা হচ্ছে। এ উদ্যোগের বিশাল পরিসর সমাজের বিভিন্ন অংশকে একসঙ্গে এসে কাজ করার সুযোগ করে দেবে। এই কর্মযজ্ঞ একই সাথে ইউনেস্কোর “শিক্ষা, সমতা ও শান্তি” অর্জনের লক্ষ্যে বিজ্ঞান-প্রযুক্তি এবং শিল্প-সংস্কৃতির একইসঙ্গে কাজ করার প্রয়োজনীয়তাকে তুলে ধরার প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে।
কারা এর আয়োজন করছে?
আন্তর্জাতিক আলোক দিবস আয়োজনের মূল উদ্যোক্তা ইউনেস্কোর ইন্টারন্যাশনাল বেসিক সায়েন্স প্রোগ্রাম বা আইবিএসপি। এই আয়োজনের পরিচালনা কমিটিতে ইউনেস্কোর প্রতিনিধিরা যেমন রয়েছেন, তেমনি আছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সহযোগী সংগঠনগুলোর সদস্যবৃন্দ। প্রতিটি দেশের একটি করে সহযোগী সংগঠন ন্যাশনাল নোড হিসেবে কাজ করে। ওই সংগঠন মূলত সংশ্লিষ্ট দেশের সকল আয়োজন সমন্বয় করে। বাংলাদেশের ন্যাশনাল নোড হিসেবে কাজ করছে বাংলাদেশ বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ সমিতি (এসপিএসবি)। এসপিএসবির প্রতিনিধি হিসেবে কাজটি সমন্বয় করেন সংগঠনের সহ-সভাপতি মুনির হাসান।
আন্তর্জাতিক আলোক দিবস কবে পালিত হবে?
২০১৮ সাল থেকে প্রতিবছর ১৬ মে এই দিবসটি পালিত হবে। ১৯৬০ সালের এই দিনে প্রথমবার পরীক্ষাগারে পদার্থবিজ্ঞানী ও প্রকৌশলী থিওডর মাইমান সফলভাবে লেজার রশ্মি তৈরি করতে সক্ষম হন। কিভাবে একটি বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার যোগাযোগ, চিকিৎসা ও অন্য অনেক ক্ষেত্রে একই সঙ্গে বিপ্লব ঘটিয়ে দিতে পারে, লেজার তার একটি চমৎকার উদাহরন। যদিও আন্তর্জাতিক আলোক দিবসের মূল সুর শুধুই বিজ্ঞান নয় বরং শিল্প-সংস্কৃতি এবং উন্নয়নসহ সকল ক্ষেত্রে সাধারন অর্থে আলোর প্রয়োগ নিয়েই আলোক দিবস কাজ করতে অঙ্গীকারাবদ্ধ।
আন্তর্জাতিক আলোক দিবস ২০২১ কীভাবে উদযাপিত হবে?
আগামী ১৬ মে ২০২১ তারিখ ইউনেস্কো বিশ্বজুড়ে অনলাইনে পালন করছে আন্তর্জাতিক আলোক দিবস ২০২১। একইসঙ্গে এই দিবসকে সামনে রেখে বিভিন্ন দেশে স্থানীয়ভাবে অনলাইনে আয়োজিত হচ্ছে শতশত অনুষ্ঠান। প্রতি বছর আমরা এই দিনটি উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে দেশজুড়ে পালন করি। ইতোপূর্বে ২০১৫ সালে আন্তর্জাতিক আলোক বছর এবং ২০১৮ সাল থেকে আলোক দিবস উদযাপনের অংশ হিসেবে আমরা আলো বিষয়ক বক্তৃতা আলোর কথামালা, হাতে-কলমে আলোকে বোঝার কর্মশালা, আলোক প্রযুক্তির প্রদশনী, ফটোগ্রাফি প্রদর্শনী ও প্রতিযোগিতা, স্কুল শিক্ষার্থীদের জন্য কুইজ, আলোর দ্যুতি, আলোর ঝিলিক, আলোর গান নিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ইত্যাদি আয়োজন করেছি।
আগের আয়োজনের ধারাবাহিকতায় এবারও আমরা দিবসটি যথাসাধ্য সুন্দরভাবে আয়োজন করতে চাই। কিন্তু কোভিড-১৯ সংক্রমণের কারণে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে আমরা আয়োজনগুলো বিভিন্ন বিদ্যালয়ে, প্রদর্শনীকক্ষে বা হলরুমে আয়োজন করতে পারছি না। তবে সবকিছুর মত এই আয়োজনেও আমরা উদ্ভাবনী শক্তি ব্যবহার করতে চাই। এবার তাই আমরা দিবসটি এমনভাবে পালন করবো যাতে সকলে ঘরে বসেই অংশ নিতে পারে সব আয়োজনে, নিরাপদে থেকেই অনুধাবন করতে পারে আমাদের জীবনে আলো ও আলোক প্রযুক্তির ভূমিকা। বিস্তারিত: spsb.org/idl2021
আলোক দিবসের প্রধান যত বিষয়
ফোটোনিকস
বিজ্ঞানের ধারনা ও প্রযুক্তির উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দু আলো। শত শত বছর ধরে আলো আর তার বৈশিষ্টসমূহ বিজ্ঞানের জগতে তোলপাড় তুলে এসেছে। ইবনে আল হাইথাম থেকে আইনস্টাইন পর্যন্ত সকলেই আলো নিয়ে কাজ করে গেছেন।
গামা রশ্মি থেকে রেডিও তরঙ্গ, আলোকবর্ণালী আমাদের সামনে তুলে ধরেছে বিশ্বের সৃষ্টিরহস্য থেকে আজকের পৃথিবী বদলে দেয়া প্রযুক্তি পর্যন্ত। ন্যানোফোটোনিক কিংবা কোয়ান্টাম অপটিকসের উচ্চতর গবেষণা মেলে ধরেছে নতুন সব আবিষ্কারের সুযোগ আর বিজ্ঞানের নতুন নতুন শাখা।
আলোকভিত্তিক প্রযুক্তি আর ফোটোনিকস সরাসরি মানবজাতির কাজে লাগছে, দিচ্ছে তথ্যভান্ডারে অবাধ প্রবেশাধিকার, টেকসই উন্নয়ন ও উচ্চতর জীবনমান।
ফোটোনিকস ভিত্তিক শিল্পগুলো হয়ে উঠছে অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। উন্নততর ঔষধ, কার্যকর যোগাযোগব্যবস্থা ও শক্তি উৎপাদনে ফোটোনিকসের ব্যবহার সমাজে নিয়ে আসছে ইতিবাচক পরিবর্তন।
দৃষ্টিশক্তি উন্নয়নের প্রযুক্তি থেকে হাতের স্মার্টফোনটি, মহাকাশ পর্যবেক্ষন প্রযুক্তি থেকে শুরু করে ইন্টারনেট বিপ্লবের ফাইবার অপটিক কেবল – ফোটোনিকসের ব্যবহার আমাদের দৈনন্দিন জীবনে যেন সর্বব্যাপী।
আলো ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা
আলোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত প্রয়োগ সমাজের সমাজের উন্নয়ন ও ইতিবাচক পরিবর্তনে ভূমিকা রাখে। ক্রমবর্ধনমান সামাজিক যোগাযোগ রক্ষার্থে এর প্রয়োজনীয়তাও অসীম। বিশ্বের শক্তি উৎপাদন, টেকসই উন্নয়ন এবং জনস্বাস্থ্য সংরক্ষনে ফোটোনিকস ব্যবহারিক ও সাশ্রয়ী সমাধানের প্রতিশ্রুতি দেয়। জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা তথা “দারিদ্র দূরীকরন, অসাম্য ও অবিচারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ এবং জলবায়ু পরিবর্তন ও এর প্রভাব মোকাবেলার লক্ষ্যে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহন” অর্জনের সংগ্রামেও ফোটোনিকস এক অন্যতম হাতিয়ার।
ফোটোনিকস বিশ্বের নাগরিকদের ইন্টারনেট ও অন্যান্য যোগাযোগের মাধ্যমে যুক্ত রাখে। ব্যবসা ও শিক্ষার এক অপরিহার্য অংশ হয়ে পড়েছে এখন ফোটোনিকস। এই নেটওয়ার্ক জবাবদিহিতামূলক ব্যবস্থার মাধ্যমে ন্যায়বিচার, শক্তিশালী বিচারব্যবস্থা তথা শান্তি নিশ্চিত করে। আলোকপ্রযুক্তি চিকিৎসা ব্যবস্থার অন্যতম চাবিকাঠি। রোগনির্নয় থেকে শুরু করে উন্নত রোগনিরাময় প্রক্রিয়া ও গবেষণা, সবকিছুতেই রয়েছে আলোকপ্রযুক্তির বিবিধ ব্যবহার। রিমোট সেন্সিং প্রযুক্তি জন্ম দেয় টেকসই কৃষিব্যবস্থার, যা বিশ্বের ক্ষুধা নিবারনের অন্যমত হাতিয়ার। একই সাথে টেকসই কৃষিব্যবস্থা জলাশয় ও সাগরের জীববৈচিত্র্য রক্ষার অন্যতম নিয়ামক। আধুনিক আলোকব্যবস্থা জীবনযাত্রার মানোয়ন্নে কার্যকর ও পরিবেশবান্ধব সমাধান দিতে পারে। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন মনিটর করা ও এর প্রভাব অনুমান করার জন্য আলোক ভিত্তিক কার্যকর সমাধান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
শিক্ষা
আলো একটি অনুপ্রেরণামূলক বিষয় হওয়ায় তরুণদের বিজ্ঞান শিক্ষায় উৎসাহিত করার উৎকৃষ্ট উপায়। বিশ্বব্যাপী শিশুদের উদ্দ্যেশ্যে করা আলোক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মাধ্যমে শিক্ষা কর্মসূচি, লিঙ্গ বৈষম্যজনিত সমস্যা তুলে ধরে এবং উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশকে কেন্দ্র করে শিক্ষা্র সুযোগ গড়ে তোলে।
উদ্ভাবন ও উদ্যোগ
বিজ্ঞান ও আলোর বহুবিধ প্রয়োগ স্বাভাবিকভাবেই স্থানীয় উদ্ভাবনের জ্বালানি হিসেবে কাজ করে আসছে, এমনকি সংকটপূর্ণ পরিবেশেও। আলো ও এ সম্পর্কিত জ্ঞান ও শিক্ষা নতুন প্রজন্মকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে ক্যারিয়ার গড়তে আগ্রহী করার পাশাপাশি তাদের উদ্যোক্তা হয়ে ওঠারও প্রেরণা দেয়।
সংস্কৃতি
আলো মানুষের সংস্কৃতিতে যুগ যুগ ধরে প্রভাব ফেলে আসছে, এবং এখনও ফেলছে। আলো ও সংস্কৃতির যোগসূত্রকে ইসলামের স্বর্নযুগ থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত স্টাডি করলে বিজ্ঞান, শিল্প ও মানবিকতার মধ্যকার সম্পর্ককে নতুন আলোয় চেনার এবং আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে ভালভাবে বোঝার ও জানার সুযোগ হয়ে ওঠে।
আলো সবসময়ই শিল্প-সাহিত্য ও মানুষের চিন্তাধারায় বড় ভূমিকা রেখে এসেছে। আলোর এই থিম তাই বিজ্ঞান ও শিল্পের মধ্যে এক সেতুবন্ধন তৈরির মাধ্যমে এই দুই জগতের মধ্যকার অদৃশ্য দেয়াল ভেঙে দেয়ায় অবদান রাখবে বলে আশা করা যায়।
আলোক দিবসের আয়োজন
বিশ্বব্যাপী আলোক দিবস উদযাপিত হচ্ছে। অর্ধশতাধিক দেশে কয়েক শত আয়োজনের মাধ্যমে মানব জীবনে আলো ও আলোক প্রযুক্তির অবদানকে উদযাপন করা হচ্ছে। বাংলাদেশে বাংলাদেশ বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ সমিতির সমন্বয়ে আয়োজিত হচ্ছে নানান অনুষ্ঠান।
বাংলাদেশে যত আয়োজন
বাংলাদেশের আলোক দিবসের কার্যক্রমের সমন্বয়ক হিসেবে দিবসটি এসপিএসবি নানা আয়োজনে পালন করছে। করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বব্যাপী পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সব আয়োজনেই কিছু পরিবর্তন আনতে হচ্ছে। এই কারণে বাংলাদেশের আয়োজনেও পরিবর্তন আসছে। এবছর সবকিছুই আয়োজিত হবে অনলাইনে, যাতে সবাই বাসায় বসেই অংশ নিতে পারে। এবারের আয়োজনগুলো এই পেজের শুরুতে ফিচার করা হয়েছে।