শুক্রবার ৪ আগস্ট ছিল আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক ৩য় বাংলাদেশ জুনিয়র সায়েন্স অলিম্পিয়াডের ঢাকার বাছাই প্রোগ্রাম। এই অলিম্পিয়াডের এটা তৃতীয় বছর। ২০১৩ সালে বাবিজসের সেক্রেটারি. বুয়েটের অধ্যাপক ফারসীম মান্নান ভারতের পুনেতে গিয়ে এর মেম্বারশীপ নিয়ে আসেন। তবে, এই প্রোগ্রামটার কথা প্রথম বের করে বায়েজিদ জুয়েল। সেবার ধার-দেনা করে আমরা ফারসীমকে পাঠাই এবং মেম্বারশীপ পাই।
২০১৪ সালের আন্তর্জাতিক অলিম্পিয়াড হয় আর্জেন্টিনায়। এটা জেনে আমরা আর কোন খোঁজ খবর করি নাই। অতো টেকা-টুকা যোগাড় করা সম্ভব না। তারপর ২০১৫ সালে আমরা ফ্রিডম ফাউন্ডেশনের কর্মবীর সাজ্জাদ ভাই-এর নেতৃত্বে কাজে নেমে পড়ি। সেবার অলিম্পিয়াড হয় ঢাকার টিচার্স ট্রেনিং কলেজে। মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী মহোদয় এসেছিলেন। সেখান থেকে পর্যায়ক্রমে দক্ষিণ কোরিয়ায় যাওয়া এবং প্রথমবারেই একটা ব্রোঞ্জপদক পাওয়া।

তবে, সেবার ব্রোঞ্জের থেকেও বেশি জরুরী ছিল বিভিন্ন দেশের ট্রেনিং সম্পর্কে জানা আর অলিম্পিয়াডে ভাল করার বুদ্ধি পাওয়া। অভিজ্ঞতা থেকে বোঝা যায় যে, এই অলিম্পিয়াডে ভাল করতে হলে ব্যবহারিককের কোন বিকল্প নেই। কাজে আমরা তৈরি করলাম মাকসুদুল আলম বিজ্ঞানাগার (ম্যাসল্যাব)। বিজ্ঞানী মাকসুদুল আলমের নামে এই বিজ্ঞানাগারের প্রথম ফলাফলই হলো গতবারের আইজেএসও-র ফলাফল। আমাদের শিক্ষার্থীরা গতবার ব্যবহারিকে খুবই ভাল করে সামনের কাতারে আসতে পেরেছে। গতবারও এটা শুরু হয়েছে বাবিজস আর বিএফএফের চেষ্টায়।  বিডিজেএসও করি সেই টিচার্স ট্রেনিং-এ। তারপর দল পাঠানো। অন্যান্য অলিম্পিয়াডের সঙ্গে এই অলিম্পিয়াডের একটি পার্থক্য হলো এতে অংশগ্রহণের একটা ফী আছে, আর শিক্ষক পাঠাতে হয় তিনজন।

গতবছর যখন আমাদের নির্বাচিতদের ক্যাম্প চলছে তখন একদিন আমি গেলাম আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের ডিএমডি কাজী তৌহিদুর রহমানের সঙ্গে দেখা করতে। নানান আলোচনার এক ফাঁকে তিনি বললেন তার ব্যাংকও একটি কোন বড় উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত হতে চায় যদি আমি সেরকম কিছু করি। তখন আমি তাঁকে জানালাম বিডিজেএসওর কথা। তিনি তখন চেয়ারম্যানের কথা বললেন।
যাহোক ওনারা আমাদের সঙ্গে যুক্ত হলেন। ওনাদের পৃষ্ঠপোষকতায় আমরা একটা সংবাদ সম্মেলন করতে পারলাম, প্রচারণারও ব্যবস্থা হল। এবং ম্যাসল্যাবের প্রভাবে আর আমাদের একাডেমিক টিমের কর্মকাণ্ডের ফলে আমাদের ৬ সদস্যরা ৩টি রূপা আর ৩টি ব্রোঞ্জ পদক নিয়ে আসলো। এটি এখন পর্আযন্মত কোন অলিম্পিয়াডে দেশের সবচেয়ে বড় অর্জন। বিজয়ীরা ফেরার পর আমরা একটা সংবর্ধনাও করতে পারলাম।

তাতে হলো কী, ঢাকার বাইরে দূর দূরান্ত থেকে আঞ্চলিকের দাবীটা দৃঢ় হলো। আমরা ভাবলাম আস্তে আস্তে করে ভ্যেনু বাড়াবো। এবং সব জায়গায় উৎসব করবো। তো, এগুলোর জন্য আবার দৌড়ালাম আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আবদুস সামাদের কাছে। তিনি রাজী হলেন। তবে, বল্লেন – একেবারে বড় না করে একটু একটু করে আগিয়ে নিতেন। আল-আরাফাহ ব্যাংক এর টাইটেল স্পন্সর হলো। আর একদিন গেলাম মতি ভাই-এর কাছে (সম্পাদক, প্রথম আলো)। প্রথম আলো আমাদের সহযোগী হল। বিজ্ঞানচিন্তা হলো ম্যাগাজিন পার্টনার। সাহস করে আলাদা ডোমেইনও কেনা হল। বিভিন্ন এলাকায় কথা বলে উৎসাহের বিবেচনায় আমরা ঠিক করলাম কোথাও কোথাও উদ্বোধন আর বাছাই অলিম্পিয়াড হবে। কেবল চট্টগ্রামে এবার আঞ্চলিকের উৎসবও হবে।

এসব করতে করতে গণিত অলিম্পিয়াডের দল নিয়ে আমি চলে গেলাম ব্রাজিলে। আর সে সময় ফাটলো বোমা। জানাগেল ৩১ আস্টের মধ্যে দলের নিবন্ধন করতে না পারলে আইজেএসওতে যাওয়া হবে না। অথচ জুলাই-এর তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত স্কুলগুলোতে পরীক্ষা। তারপর শোকের মাস। কিন্তু দল পাঠাতে হলে আমাদের আঞ্চলিক, জাতীয়, ক্যাম্প, টিম সিলেকশন সবই করে ফেলতে হবে আগস্টের ২০-২২ তারিখের মধ্যে। ব্রাজিলে বসে দেখলাম বাবিজসের কোষাধ্যক্ষের নেতৃত্বে এর একাডেমিক টিম নয় ণয়টি আঞ্চলিক পর্ব গুছিয়ে ফেলেছ। ২৮ জুলাই ৫টা, ২৯ একটা হয়ে গতকাল ৪ আগস্ট হয়েছে ঢাকারটা আর আজ ৫ আগস্ট হচ্ছে চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহে।

 

এমনিতে বৃষ্টিবাদলা, রাস্তাঘাট সুবিধার নয়। তারপরও আমাদের একদল স্বেচ্ছাসেবী, প্রায় ৪ হাজার শিক্ষার্থী আর অভিভাবক মিলে শুরু হয়েছে নেদারল্যান্ডের জন্য বাংলাদেশ দলের অন্বেষন। সেই সঙ্গে বিজ্ঞানের প্রতি শিক্ষার্থীদের উৎসাহ ফিরিয়ে আনা তো থাকলোই।

১২ আগস্ট ইউনিভার্সিটি ও এশিয়া প্যাসিফিকে হবে এবারের জাতীয় পর্ব।

সবার জন্য শুভ কামনা।